বাংলাদেশে যে ফর্মে ছাত্ররাজনীতি বিরাজমান, বিশ্বের উন্নত কোনো রাষ্ট্রে এমনটি নেই। ছাত্ররাজনীতির এদেশে একটা ঐতিহাসিক পটভূমি রয়েছে। সেটিকে ব্যবহার করে বর্তমানে এহেন কোন অপরাধ নেই তারা করছে না বিশেষ করে সরকারদলীয় ছাত্রসংগঠন। ছাত্রলীগের ও একটি গৌরবোজ্জ্বল অতীত ছিল। সেটিকে ব্যবহার করে তারা অপরাধের পাহাড় করে ফেলেছিল। দেশবাসী তাদের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে শেষমেশ এদেশে থেকে পালাতে হয়। ছাত্রদলের ও শিবিরের নামে বিগত সময় অভিযোগের শেষ নেই। বেশকিছু হত্যার সাথেও এদের নাম জড়িত অতীতে। এখন ক্ষমতায় কোনো রাজনৈতিক দল নেই। সামনে নির্বাচন দিলে বিএনপির সম্ভাবনা অনেক বেশি। সেটিকে আমলে নিয়ে এখন থেকেই যদি আবার পুরোনো স্টাইলে ফেরত যাওয়ার চেষ্টা করে,তাহলে এর পরিণতি ও ভালো হবে না নিশ্চিত করেই বলা যায়।
গতকাল কুয়েটে যা ঘটলো, এটিকে কি কোনো যুক্তি দিয়ে জাস্টিফাই করা যায়? অথচ আমি অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম, যারা জুলাই আন্দোলনে এত জ্ঞান দিলেন, ন্যায্যতার কথা বলে, লিখে তাদের অবস্থান জানান দিলেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে, তারাও নির্লজ্জভাবে এই ঘটনাকে জাস্টিফাই করছেন। অন্য দলের সমালোচনা তো করাই যায়, কিন্তু নিজ দলের সমালোচনা করতে হেডম লাগে। এখন বুঝতেছি এরা কতটা হিপোক্রেট। কতটা ডাবল স্ট্যান্ডার্ড। যে অপরাধের জন্য ছাত্রলীগকে সমালোচনা করেছে, সেই একই অপরাধে ছাত্রদলের ক্ষেত্রে এনারা নিশ্চুপ। ধিক্কার আপনাদের মানসিকতাকে। আপনাদের কোনো অধিকার নেই যারা তখন সরকারের পক্ষে কথা বলেছিল, তাদের বিরুদ্ধে বলবার। কেননা, সরকারে আসার আগেই আপনার নিজেদের দলের দাস বানিয়ে নিয়েছেন। আপনারা তো একধাপ না, কয়েক ধাপ এগিয়ে তাদের থেকে। নির্লজ্জতা ও মানবিক দিক থেকেও নিম্নস্তরের।
এখন দেশটাকে কি বানাতে চান আপনারা সবাই? চাঁদাবাজি কি চলবে, টেন্ডারবাজি কি চলবে ছাত্র রাজনীতির নামে? দেশ কি একই বৃত্তে ঘুরতে থাকবে? উন্নত দেশগুলোতে ছাত্ররাজনীতি নেই, তার জন্য কি তারা পিছিয়ে গেছে নেতৃত্বে? ছাত্র রাজনীতি থেকে কত জন জাতীয় রাজনীতিতে অবদান রাখছে? আর কত ছেলেমেয়ের জীবন ধ্বংস করছেন আপনারা?সকল রাজনৈতিক দলের জাতীয় নেতৃবৃন্দের ঐক্যমতের ভিত্তিতে এদেশে ছাত্ররাজনীতি ও শিক্ষক রাজনীতি বন্ধ করুন। এই একটা সিদ্ধান্ত দশকে অনেক দিক থেকে এগিয়ে দিবে। ছাত্ররাজনীতি তে ভালো যেটুকু আছে, তার থেকে খারাপ ঢের বেশি। কোনো যুক্তি দিয়েই বর্তমান পরিস্থিতিতে আপনি এটাকে জাস্টিফাই করতে পারবেন না।
ছাত্র সংসদ থাকুক। দলীয় ছাত্র রাজনীতি বন্ধ হউক। ক্যাম্পাস ভিত্তিক ছাত্র রাজনীতি বন্ধ হউক। কেউ রাজনীতি করতে চাইলে, ক্যাম্পাস এর বাহিরে সেই কার্যক্রম চালাক। গতকাল যে রাম দা মহড়া হলো, যে সন্ত্রাসীদের ছবি বা ভিডিও তে দেখা গেলো, তাদের গ্রেফতার করুন। কঠিন শাস্তির মুখোমুখি করুন। রাজনীতিতে পারসেপশন খুব গুরুত্বপূর্ণ। ছাত্রদল বা শিবির নিয়ে মানুষের যে পারসেপশন তৈরি হচ্ছে সেটির কনসিকুয়েন্স কিন্তু মারাত্মক। সামনে জাতীয় নির্বাচন। তার আগেই এগুলো ঠিক করুন যেন নির্বাচনের সময় কেউ সেন্টার দখল করবে দুঃসাহস না দেখায়। এরা এখনো পুরোনো স্টাইলে চলতে চায়। এদের রুখে দিন। সেবার মানসিকতা থাকলে রাজনীতি করুন, ভোগের মানসিকতা থাকলে সরে পড়ুন। সেটি আর এই দেশে চলবে না।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Please do not enter any spam link in the comment box