বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে করা শ্বেতপত্র প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, আওয়ামি লীগ আমলে টাকা পাচার হয়েছে প্রায় ২৮ লাখ কোটি। শুধু ঘুষ বাণিজ্যেই প্রায় ২.৫ লাখ কোটি। এই টাকা পাচারে ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ ছাড়াও আছেন আমলারা। আমলারা ঘুষ বাণিজ্য প্রায় ১ লাখ কোটি হাতিয়েছেন। এই দুর্নীতিবাজ আমলা শ্রেনী এখন কোথায়? এদের সবাই কি বিদেশে গেছে, চাকুরী ছেড়ে দিয়েছে? না। এদের অধিকাংশই দেশে আছে এমনকি চাকুরিতেই আছে। এরা আবার নতুন সুযোগ খোজার চেষ্টা করছে। এই সরকারের বড় ব্যর্থতা হবে যদি এদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে না পারে, যদি এদের প্রমোশন এই সরকারের হাত দিয়েই হয়, যদি এবারও জাতির এইসব কলঙ্ক পার পেয়ে যায়। রাজনীতিবিদরা ও ব্যবসায়ীদের একটা বড় অংশ অসৎ দেশের প্রায় সবাই জানে। কিন্তু এই আমলা শ্রেনী এরা সব সরকারের সময় তোষামোদি করে হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি ও পাচারের মত জঘন্য অপরাধ করেছে। এদের সামাজিক ভাবমূর্তিও অতি উচ্চ। এরা এক একটা জেলায় উপজেলায় শাসকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। এদের লাগাম টেনে ধরা দরকার।
হায়রে অভাগা দেশ। এই ২৮ লাখ কোটি টাকা যারা পাচার করেছে, তারা তো সেগুলো ভোগও করতে পারবে না। দেশের টাকা নিয়ে ধনী দেশগুলোকে আরো ধনী বানাচ্ছে। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান এর এটি কমন ট্রেন্ড। দেশের লাখ লাখ কোটি টাকা এরা বিদেশে পাচার করে। এদের আশ্রয় দাতা দেশের তালিকায় শীর্ষে আছে ইউকে, দুবাই, কানাডা, ইউএস, সিঙ্গাপুরে। এক সময় ইউকে সারা বিশ্ব প্রত্যক্ষ ভাবে শোষণ করত শাসনের নামে, এখন করে পরোক্ষভাবে। যারা অবৈধ পথে টাকা কামায়, তাদের নিরাপদ আশ্রয় হয়ে উঠেছে এসব দেশ।
যারা টাকা পাচারের শীর্ষে, এরাই দেশপ্রেমের সবক দিতো। সবাইকে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনাতো, চেতনার গল্প শোনাতো। এখন সময় এদের ধরে ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করা, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা। যদিও প্রক্রিয়া অনেক জটিল, তারপরও চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। দেশ ডাকাতদের শাসন থেকে মুক্ত হয়েছে, কিন্তু সেই ডাকাত দলের সদস্যরা এখনো সক্রিয়। এদের আপনি খুঁজে পাবেন সচিবালয়ে, বাংলাদেশ ব্যাংক সহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি ব্যাংক এ, এদের আপনি খুঁজে পাবেন আপনারই আসে পাশে, ক্ষমতার আশেপাশে। চিহ্নিত করা ও সঠিক সাজার আওতায় না আনতে পারলে, এরা ষড়যন্ত্র বন্ধ করবে না। সরকারের ভিতরে থেকেই, নীতি নির্ধারণী জায়গায় থেকেই এরা দাবার গুটি ঘুরিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র লিপ্ত। এই টাকা পাচারকারী, দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের মুখোশ যত তাড়াতাড়ি খুলা যায়, আইনের আওতায় আনা যায়, ততই মঙ্গল ।
দুর্নীতিকে এতটা ডাল ভাত বানিয়ে ফেলা হয়েছিল যে, সংবাদ সম্মেলনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বলেই ফেললেন, তার পিয়ন ৪০০ কোটির মালিক। গৃহপালিত সাংবাদিকদের একটা প্রশ্ন করবারও সাহস হলো না যে, এই দায় প্রধানমন্ত্রী হয়ে আপনি কিভাবে এড়াতে পারেন? ফ্যাসিবাদের প্রেতাত্মারা এখনো গণমাধ্যমে সক্রিয়। তারাও আমলাদের মতোই ভয়ংকর। সেইসব বুদ্ধিজীবী যারা কিনা তখন গণহত্যাকে প্রকাশ্য সমর্থন দিয়ে, শেখ হাসিনার ওপর তাদের আস্থা আছে জানিয়ে রাস্তায় নেমেছিলেন, তাদের বোধোদয়ও এখনো হয় নি। কাউকে বলতে বা লিখতে শুনিনি যে, আমি ভুল করেছিলেন, আমার তখনকার অবস্থান সঠিক ছিল না, কিংবা ক্ষমা চেয়ে লিখতে। হঠকারিতা, মিথ্যে অহমিকা এদের রক্তে ঢুকে গেছে। এরাও নিশ্চয় বুদ্ধিবৃত্তিক অপরাধ করেছেন। তাদের ক্ষমা চাইতেই হবে।
এত টাকা পাচার হয়ে গেলো বাংলাদেশ ব্যাংক কিছুই জানত না, এটি অবিশ্বাস্য। সেইসব বাঘা বাঘা কর্মকর্তারা দেশেই আছে, আওয়ামী শাসনামলে সেই সব সচিব, গভর্নর যারা বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন, তাদেরকেও আইনের আওতায় আনুন। নিশ্চই আরো অনেক কিছুই জানার বাকি। দুর্নীতি দমন কমিশনকে আরও শক্তিশালি করুন। দুর্নীতির শিকড় উপ্রে ফেলুন এবং এদের প্রত্যেককে শাস্তির আওতায় আনুন। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিন যাতে ভবিষ্যতে কেউ আর সাহস না করে এমন অপরাধের। দেশে এদের স্থায়ী, অস্থায়ী সম্পদ বাজেয়াপ্ত করুন। এই সরকারের সব থেকে বড় দায়িত্ব হচ্ছে দোষীদের বিচার করা। দোষীদের লিস্ট এত লম্বা যে, এটি বাস্তবায়ন কঠিন। কিন্তু কঠিন হলেও, সবাইকে তার পাওনা বুঝিয়ে দিতে হবে, তা নাহলে, ভবিষ্যতের নতুন বাংলাদেশ কিভাবে আসবে??
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Please do not enter any spam link in the comment box