বিভীষিকাময় উন্নয়ন

গতকাল যে পাঁচজন মারা গেলেন, তাদের পরিবারকে আপনি কি বুঝাবেন? কোন উন্নয়নের গল্প শোনাবেন? এতো নির্মম, বর্বর উন্নয়নের কি খুব দরকার আছে? এই বর্বর অবকাঠামো উন্নয়ন কি দেশ পাল্টে দিতে পারবে? আর কবে নীতিনির্ধারকরা বুঝবেন, সাধারণ মানুষ বুঝবেন যে এটি একপ্রকার মরিচীকা। দূর থেকে দেখে মনে হয় সত্যি অনেক কিছু হচ্ছে। বাস্তবতা ভিন্ন। যেকোন নির্মাণ কাজে জননিরাপত্তা আগে নিশ্চিত করতে হয়। এটি কমন সেন্স। কি কনস্ট্রাকশন কোম্পানি, কি বিআরটিএ, কি পুলিশ বা সরকার কেউই এ বিষয়টি মাথায় নিলো না। এ পাচঁজনের মৃত্যুকে কোনভাবেই আপনি দূর্ঘটনা বলতে পারবেন না। এটি নিঃসন্দেহে হত্যা। হত্যাকারী আসামী হলো, কন্স্ট্রাকশন কোম্পানি, ঠিকাদার, আইনের আবমাননায় যারা ব্যবস্থা নেন নি, জননিরাপত্তা ইস্যুটি যাদের দেখবার কথা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, এবং সর্বোপরি এ প্রকল্পের সরকারি দপ্তর। এনাদের নামে আদালতে মামলা হওয়া উচিত। মানুষের জীবন এত সস্তা না। মানুষের মৃত্যু শুধু একটা সংখ্যা না। পাঁচটি স্বপ্নের অপমৃত্যু ঘটলো। 

আমার বাড়ির পাশে রাস্তার ধারে একটা কন্স্ট্রাকশন কাজ চলছে। বড় বড় মেশিনারিজ চলে এসেছে। সেটি রাস্তার ধারে হওয়ায় সেই রাস্তাটির পাশে আরেকটি নতুন রাস্তা করে দিয়ে নিকটস্থ রাস্তাটিকে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে জননিরাপত্তার জন্য। এখানে ওপেন কোন নির্মাণ কাজ আপনার চোখে পড়বে না। এটিকে বলে সভ্যতা। সত্যিকারের উন্নয়ন মানে গার্মেন্টেসের ৫০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি না, সত্যিকারের উন্নয়ন মানে বিশ্বের সবেচেয়ে সস্তা শ্রমিকের দেশ হওয়া না, সত্যিকারের উন্নয়ন হচ্ছে মানবসম্পদ উন্নয়ন। জাপানে প্রতি ঘন্টা শ্রম মূল্য মিনিমাম ১০ ডলার। একজন মানুষ সারাদিন এ ১০০ ডলার ইনকাম করতে পারে, যেটি বাংলাদেশে গামেন্টস শ্রমিকদের একমাসের বেতন। আর এটি নিয়েই আমরা গর্ব করি। বৈশ্বিক শ্রমবাজারেও বাংলাদেশ অদক্ষ শ্রমিকের বড় যোগানদাতা। সেটি নিয়েও গর্বের শেষ নেই। আর কত বোকা বানাবেন। এবার দেশের জন্য কাজ করুন। মানবসম্পদ উন্নয়নে কাজ করুন। আমরাও একটা উন্নত, সভ্য ও মানবিক দেশ গড়তে চাই। সেটিতে মূখ্য ভূমিকা তো আপনাদেরই রাখতে হবে। সেটি করবার জন্যই তো জনগন আপনাদের গদিতে বসিয়েছে। সব লুটপাট করে খাওয়ার জন্য নয়।

মন্তব্যসমূহ