ভুটান, পৃথিবীর একমাত্র দেশ যেটি কার্বন নেগেটিভ। কার্বন নেগেটিভ বলতে বোঝায়, যে পরিমান কার্বন ডাই অক্সাইড দেশটি উৎপন্ন করে তার থেকে বেশি পরিমাণ কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে। পরিবহন থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ উৎপাদন সবকিছু থেকেই কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপন্ন হয় । ভুটান ১ বছরে ৭ মিলিয়ন টন কার্বন-ডাই অক্সাইড শোষণ করে এবং ২ মিলিয়ন টন উৎপন্ন করে। যার কারণে ভুটান কে কার্বন নেগেটিভ দেশ বলা হয়। কার্বন ডাই অক্সাইড বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধানতম কারণগুলো একটি। পৃথিবীতে দিন দিন এটির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় সব দেশ চেষ্টা করছে কিভাবে কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে কার্বন নিউট্রাল দেশ হওয়া যায় আর সেখানে ভুটানই একমাত্র দেশ যেটি কিনা কার্বন নেগেটিভ।
ভুটান এর চতুর্থ রাজা এটি মনে করতেন যে জিডিপির থেকে গ্রোস ন্যাশনাল হ্যাপিনেস বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এটির সহজ বাংলা হচ্ছে রাষ্ট্রের জনগণের সুখ, রাষ্ট্রীয় সামগ্রিক উৎপাদন (জিডিপি) এর থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কত বড় দার্শনিক ছিলেন তিনি। এরপর থেকে ভুটানের সামগ্রিক উন্নয়ন শুধুমাত্র জনগনের সুখের কথা চিন্তা করে করা হত যাতে প্রতিবছর জনগনের সুখে থাকার সূচক বাড়ে। যেখানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ বন ধ্বংস করছে সেখানে বনভূমিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এটির পরিমাণ কিভাবে আরো বৃদ্ধি করা যায়, সেটিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে গুরত্ব দেয়া হয়। সেই ভাবনা থেকেই গাছ লাগিয়ে গিনেস বুকে ওর্য়াল্ড রেকর্ডও আছে দেশটির ( ১ ঘন্টায় ৪৯,৬৭২ টি গাছ লাগিয়ে এ রেকর্ড করেন)।দেশটির সংবিধানে স্পষ্ট করে উল্লেখ আছে, মোট আয়তনের সাপেক্ষে বনভূমির পরিমাণ ন্যূনতম ৬০ শতাংশ রাখতে হবে, এটির নিচে কোনভাবেই নামা যাবে না।
বায়োলজিক্যাল করিডোর অর্থাৎ বন্যপ্রাণির চলাচলের সুবিধার জন্য এক বনভূমির সাথে অন্য বনভূমির সংযোগ করে দেয়ার মাধ্যমে সমগ্র দেশে বন্যপ্রাণির চলাচলের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে ভুটানে । ইকোসিস্টেমের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ। গাছ কেটে যাতে জ্বালানির ব্যবস্থা করতে না হয়, সেজন্য কৃষকদের ফ্রি ইলেক্ট্রিসিটি সেবা দেয়া হয়। পাশাপাশি অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা সত্বেও এলইডি লাইট, ইলেক্ট্রিক গাড়িতে ভর্তূকি দিয়ে থাকে যাতে কার্বন নিঃসরণ কম হয়। হাইড্রো পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে দেশটির বেশির ভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়ে থাকে। তারপরও দেশটিকে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে কেননা বিশ্বের বৃহত্তর কার্বন নিঃসরণকারী দুটো দেশের (চীন ও ভারত) মাঝে এটি অবস্থিত।
মাথাপিছু আয়, জিডিপি এগুলোর সাথে সাথে দেশের নাগরিকদের সামগ্রিক সুখ যে বেশি গুরুত্বপূর্ণ এই চিন্তাটি ছড়িয়ে পড়ুক সারা বিশ্বে। কেননা মাথাপিছু আয় বাড়তে থাকলেও নূনতম নাগরিক সুবিধা না পেলে, দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতির কারণে সাধারণ মানুষ অবর্ণনীয় কষ্টে থাকলে, সেই আয়, সেই জিডিপি একটা শুভঙ্করের ফাঁকির মতো শোনায়।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Please do not enter any spam link in the comment box