তদবির কি আদৌ বন্ধ হবে?

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারে নাম ব্যবহার করে যেকোন তদবির বন্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে। এ নির্দেশটি কয়েকটি বিষয়ে সুনির্দিষ্ট বার্তা দেয়, যার অন্যতম হচ্ছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বা তার পরিবারের নাম ব্যবহার করলে অবৈধ সুবিধা পাওয়া যায় বা ইতোমধ্যেই এটি চলমান। যে কারণে এ ধরনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রশ্ন হলো কারা এ ধরনের পরিচয় ব্যবহার করে? শাহেদ নামে এক ব্যক্তি দীর্ঘদিন যাবৎ এ ধরনের প্রতারণা করে আসছিলেন। তিনি সেখানে রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করেছিলেন। এ ধরনের প্রতারক অনেক আছে। কিছু ব্যক্তি যারা এ ধরনের পরিচয় ব্যবহার করে অবৈধ সুবিধা ভোগ করছেন, তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হোক শাহেদের মতো।  

আমার প্রশ্নটা অন্য যায়গায়। কেন শুধু প্রধানমন্ত্রীর নাম ব্যবহারে তদবির বন্ধের নির্দেশনা এলো? বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে সব ধরনের স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানেগুলোর নিয়োগে যে রাজনৈতিক তদবিরের প্রচলন আছে, সেটি বন্ধে নির্দেশনা আসবে কবে? কেন শুধু যোগ্যতাকে মাপকাঠি ধরে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না? মন্ত্রী, এমপির ফোন কবে বন্ধ হবে বিভিন্ন তদবির করবার জন্য? কোন জায়গাটায় তদবির নেই!! বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর নিয়োগে তদবির, শিক্ষক নিয়োগে তদবির, সেকশন অফিসার থেকে শুরু করে ‍পিয়ন পর্যন্ত নিয়োগে তদবির, গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়োগে তদবির, বিভিন্ন পোষ্টে প্রমোশনে তদবির, পোষ্টিং এ তদবির। শুধু তদবির করেই শেষ নয়। এর সাথে বিশাল অংকের আর্থিক লেনদেনের খবরও পাওয়া যায়। 

রাজনীতি এক সময় ছিলো আদর্শের যায়গা থেকে, মানুষের কল্যাণ্যের জন্য। সেটি বর্তমানে রূপ নিয়েছে অবৈধ সুযোগ সুবিধা নেয়ার একটা মাধ্যম হিসেবে। আপনি নির্দিষ্ট কোন দলের নেতা মানে আপনার সব অপরাধ মাফ। বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নামে নেতারা বিভিন্ন অবৈধ সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে। রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে কোন অবৈধ সুযোগ নেয়া স্পষ্টত অন্যায়। রাজনৈতিক পরিচয় ব্যতিত কিংবা তদবির ছাড়া, যোগ্যতা থাকা সত্বেও অনেকেই কাঙ্খিত যায়গায় যেতে পারছেন না। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এটি প্রকট আকার ধারণ করেছে। 

তদবির ছাড়া কোন কাজই হয় না। গৃহহীনদের ঘর থেকে শুরু দুস্থদের জন্য সরকারি সাহায্য, সবখানেই তদবির যেনো অঘোষিত নিয়ম। সব জায়গায় তদবির বন্ধ হোক। রাজনৈতিক পরিচয় কোন যোগ্যতা হতে পারে না। রাজনৈতিক পরিচয়ে সব ধরনের নিয়োগ বন্ধ হোক। যোগ্যরা সব জায়গায় নিয়োগ পাক। যেকোন ধরনের তদবিরকে অযোগ্যতা হিসেবে বিবেচনা করার নির্দেশনা দেয়া হোক। যিনি তদবির করবেন এবং যার জন্য তদবির করবেন, দুজনকেই তিরস্কৃত করা হোক। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের হতে এধরনের নির্দেশনা দেরিতে হলেও দেয়ার জন্য ধন্যবাদ। সেই সাথে সব ধরনের তদবির বন্ধের জন্য নির্দেশনা দেয়া হোক। 

মন্তব্যসমূহ