করোনার সাম্প্রতিক পরিস্থিতি, টিকা বাস্তবতা ও কিছু অনুরোধ

এটি ০৭ জুলাই ২০২১ এ লেখা।


দেশের এই মূহুর্তে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ও বেদনাদায়ক খবর হচ্ছে আজকে মৃত্যু রেকর্ড । এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। ২০১ জন মারা গেছেন ২৪ ঘন্টায়। শনাক্তের যে তথ্য এসেছে তার থেকে কয়েকগুণ বেশি মানুষ যে আক্রান্ত সেটিতে কোন সন্দেহ নেই। কেননা আমাদের সীমাবদ্ধ টেস্ট সুবিধার মধ্যে ৩১% এর বেশি মানুষের দেহে এ ভাইরাস পাওয়া গেছে। কমপক্ষে ৫০ হাজার নমুনাও পরীক্ষা করতে পারলে সংখ্যাটা আরো ভয়াবহ আসতো হয়তো।

এবারের আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুঝুকিঁ অত্যন্ত বেশি। গ্রামেও আক্রান্ত রোগী পাওয়া যাচ্ছে। চিকিৎসায় খুব একটা ভালো হচ্ছে না দুটো কারণে। এক. দেরিতে টেস্ট করানো. ২. দেরিতে হাসপাতালে আসা। শেষ মূহুর্তে আর করার কিছুই থাকছে না।
মৃত্যুঝুকিঁ হ্রাসের এখন পর্যন্ত একমাত্র কার্যকরী উপায় ভ্যাক্সিন নেয়া, যা গবেষণায় প্রমানিত। সরকার আবারো গণভ্যাক্সিন কার্যক্রম শুরু করেছে। নিজে নিবন্ধন করুন। পরিবারের বয়োজ্যোষ্ঠদের টিকা নিতে উৎসাহিত করুন। গ্রামে সচেতনতা বাড়ানো অনেক জরুরি।কেননা এখন এটি গ্রামগুলোতে ছড়িয়ে পড়ছে। এ মূহুর্তে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীরা অনেকেই গ্রামে আছেন। সচেতনতা বৃদ্ধিতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একটা অন্যরকম শক্তি আছে। এটিকে কাজে লাগিয়ে সচেতনতা বাড়ান। গ্রামের মানুষজনকে এর ভয়াবহতা ব্যাখ্যা করে, প্রয়োজনে ভিডিও দেখিয়ে হলেও সচেতনতা বৃদ্ধি অত্যন্ত জরুরি। গ্রামের মানুষদের জন্য ভ্যাক্সিন গ্রহণ প্রক্রিয়াকে আরো সহজতর করা উচিত।
এ মূহুর্তে বাংলাদেশের পরিস্থিতি ভারতের চেয়েও খারাপ। ১৭ কোটি মানুষের দেশে ২০০ জনের মৃত্যু ১৩০ কোটির দেশে ১৫০০ জনের মৃত্যুর সমান। ভারতের মৃত্যু এখন ১০০০ এর নিচে। তুলনামূলক পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে ভারতে। আর ক্রমাগত অবনতি হচ্ছে বাংলাদেশে। শনাক্তের দিকে থেকেও আমাদের পরিস্থিতি ভয়াবহ।
সরকারের যে কাজগুলো অনেক আগেই করার কথা ছিলো, সেগুলোতে গতি আসুক এই অনুরোধ করছি। কয়েকটি কাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিধায় এগুলোতে সমন্বয় ও গতি দুটোই জরুরি। এরকম কয়েকটি হচ্ছে-
১. সবার জন্য টিকা নিশ্চিতকরণ ও কুটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানো। টিকা এখন একটি বৈশ্বিক রাজনীতির অংশ। সেটিকে মাথায় রেখে কাজ করা।
২. গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় আনার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করা। গ্রামে গ্রামে করোনা প্রতিরোধ কমিটি গঠন করে দেয়া।
৩. দ্রুতগতিতে জেলা ও উপজেলাগুলোতে আইসিইউ সুবিধা ও করোনা চিকিৎসা সামগ্রীর যোগান বৃদ্ধি করা ।
৪. অক্সিজেন সংকট মোকাবেলায় অক্সিজেন উৎপাদন বৃদ্ধি করা এবং নতুন প্ল্যান্ট স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া।
৫. চিকিৎসক ও নার্সদের সুরক্ষা সামগ্রীসহ সার্বিক সুবিধাদি নিশ্চিত করা।
৬.বিভিন্ন জেলায় জেলায় ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপন করা। এটি সেনাবাহিনীর সহায়তায় করা যেতে পারে।
৭. করোনা চিকিৎসায় ব্যবহৃত ঔষধ সহ অন্যন্য উপকরনের সরবরাহ বাজারে নিশ্চিত করা যাতে খারাপ পরিস্থিতিতে সংকট বা কৃত্রিম সংকট তৈরী না হয় সে বিষয়ে সচেতন থাকা।
এগুলোর দিকে মনোযোগ বাড়ানোর অনুরোধ করছি। আমরা জানি না আরো কি অপেক্ষা করছে আমাদের সামনে। এ রকম পরিস্থিতি তো আমরা আগে চিন্তাই নি। তাই আর অবহেলা নয়। সবাইকে সচেতন হতে হবে। নিজের জন্য, পরিবারের অন্যদের জন্য। প্রতিবেশীদের জন্য ও সর্বোপরি দেশের জন্য। মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হোক। এ মহামারী থেকে মুক্তি দিন।

মন্তব্যসমূহ