রাজনীতি ও বিশ্ববিদ্যালয়

 

বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে শুধু রাজনীতিকে নির্বাসনে পাঠানো গেলে শিক্ষা ও গবেষণায় ব্যাপক অগ্রগতি সম্ভব। শিক্ষক ও ছাত্র দুটোই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা মূলত মাস্টার্স ও পিএইচডির ছাত্ররাই করে থাকেন। শিক্ষকরা গবেষণাগুলোকে সুপারভাইজ করেন। কোন পক্ষ দূর্বল হয়ে পরলে, একটি গবেষণা সফলভাবে সম্পন্ন করে ভালো জার্নালে প্রকাশ করা কঠিন হয়ে পড়ে।


বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধানতম কাজ হচ্ছে শিক্ষা ও গবেষণা। গবেষণার মাধ্যমে নতুন নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করা। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে প্রধান পার্থক্য হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণার মাধ্যমে জ্ঞান সৃষ্টি করে। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একমাত্র কাজ হচ্ছে রাজনীতি করা। নিবিড়ভাবে রাজনৈতিক নেতাদের মতো প্রত্যেকটা অনুষ্ঠান জমকালো করে করা। নিয়মিত বিভিন্ন রাজনৈতিক সভা সমিতি করা। আর ছাত্রদের যে রাজনীতি সেটি তো আরো বেপরোয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে কতশত ছাত্র যে ছাত্ররাজনীতির কবলে পড়ে মাদকাসক্ত থেকে শুরু করে অপরাধী হয়ে উঠছে, জীবনটাকে নিজ হাতে গলা টিপে শেষ করে দিচ্ছে তার হিসেব নেই। প্রত্যেক সরকারের বেলায় ছাত্ররাজনীতির একই রূপ আমরা দেখে আসছি। গেস্টরুম টর্চার থেকে হত্যা পর্যন্ত হয়েছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। আবরার, সাদসহ অনেক ছাত্রকে জীবন দিতে হয়েছে তাদেরই সহপাঠীদের হাতে, হতে হয়েছে নোংরা রাজনীতির শিকার। প্রত্যেক সরকারের ক্ষেত্রেই ছাত্রসংগঠনগুলো হচ্ছে নির্ভরযোগ্য ও নিরাপদ প্রহরীদের মতো। সরকার যখন চাইবে, যেভাবে চাইবে, যে ইস্যুতে ডাকবে কাছে পাবে। সরকারের বিভিন্ন সিনিয়র নেতৃবৃন্দে কথাবার্তা শুনলে মনে হয় ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছেই রাজনীতি করার জন্য, সরকারকে টিকে থাকতে সহায়তা করার জন্য। এটা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সব সরকারের ক্ষেত্রেই সত্য।

ছাত্র ও শিক্ষক উভয় ক্ষেত্রেই সরকারদলীয় রাজনীতি করার ঝোঁক বেশি। শিক্ষক ও ছাত্রদের, উভয় ক্ষেত্রেই যারা নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করেন তাদের লাভ সবচেয়ে বেশি। এজন্যই এ দুটো ক্ষেত্রেই নেতৃত্বের লড়াই অনেক প্রতিযোগীতাপূর্ণ। শিক্ষকদের ক্ষেত্রে লাল, সাদা, সবুজ, হলুদ, বেগুনী, ডোরাকাটাসহ অনেক রাজনৈতিক দল সমর্থিত সংগঠন গড়ে ওঠে। এগুলোর নেতৃত্ব ও নেতার স্তরের উপর ভিত্তি করে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন প্রশাসনিক পদ-পদবি বন্টন করা হয়। যোগ্যতাকে ছাপিয়ে রাজনৈতিক পরিচয়ই হয়ে ওঠে মূখ্য।

শিক্ষক নেতাদের সাথে ছাত্রনেতাদের একটা ভালো সখ্যতা গড়ে উঠে । প্রশাসনের সাথেও একটা নিবিড় যোগাযোগ থাকে । একজন ছাত্রনেতাকে তার অধীনস্ত ২০০-২৫০ জন পাতিনেতাকে চালাতে হয়, পাতিনেতাদেরও আবার জুনিয়র পাতিনেতা থাকে। এতসব কাজের আর্থিক যোগাদাতা কারা? খুব সহজাত প্রশ্ন। উত্তরটাও কারো অজানা নয়। এটাই সিস্টেম। এটাই ৫০ বছরের বাংলাদেশ। শিক্ষকনেতারা দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ, মন্ত্রী এমপি এদের সাথে নিবিড় যোগাযোগ রাখেন, তাদের তৈলমর্দন সহ যা যা করণীয় করতে থাকেন, ভাইস চ্যান্সেলর সহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদের জন্য তাদের কাছে ধরনা দিতে থাকেন। ছাত্রনেতারা তাদের কেন্দ্রীয় নেতাদের দৈনন্দিন কার্যক্রমকে নিবিড়ভাবে অনুসরণ করেন, যেখানে যান সেখানে যাওয়ার চেষ্টা করেন, যা বলেন সেগুলোকে কোট করে তৈলমর্দন করে ফেসবুকে সারাদিন লিখতে থাকেন, ক্যাম্পাসের পলিটিক্যাল শিক্ষক নেতাদের সাথেও যোগাযোগ রক্ষা করেন ভালো পোস্ট পদবী পাওয়ার জন্য।

এভাবেই চক্রাকারে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও রাজনীতি চলছে বাংলাদেশে। এখন যারা বিরোধীদলে তারা চুপ করে আছেন, সরকার দলে আসলে দেখে নিবেন এই আশায়। সব কিছু ডায়রিতে লিখে রাখছেন তারা, কতটা ত্যাগ স্বীকার করছেন তারও বিভিন্ন প্রমাণ জড়ো করে রাখছেন, দল ক্ষমতায় আসলে কাজে লাগবে।। যারা সরকারদলে আছেন তারাও অতীতের কষ্ট, নির্যাতন ব্যাখ্যা করে প্রমাণ করতে চাচ্ছেন যে তারা কতটা ত্যাগী ছিলেন এবং এর প্রতিদানস্বরূপ তারা এই পদ, পদবি ডিজার্ভ করেন। প্রত্যাশার সাথে প্রাপ্তির গরমিল হলেই আক্রমণ, পাল্টা আক্রমণ চলে। পরিস্থিতি বেশি খারাপ হলে প্রয়োজনে সরকার সমর্থিত একাধিক রাজনৈতিক প্লাটফর্ম গড়ে ওঠে। রাজনীতি উচ্চশিক্ষাঙ্গনে এমনভাবে জড়িয়ে গেছে যে বিশ্ববিদ্যালয়ে সত্যিকার অর্থে কেউই নিরপেক্ষ নেই। কোন না কোন রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করেন। এটির কারণটা অবশ্য অন্য। একজন ছাত্র ক্লাসের টপার হওয়ার পরও তাকে সরকারদলীয় ছাত্রসংগঠনের সদস্য হতে হবে শিক্ষক হতে হলে এবং তার একটি সার্টিফিকেট ভাইভার সময় সঙ্গে রাখতে হবে এটি অলিখিত নিয়ম। একজন টপারকে যখন এটিতে আপনি বাধ্য করবেন, স্বাভাবিকভাবেই শিক্ষক হওয়ার পর সে রাজনীতিতে জড়িয়ে যাবে।


সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষকদের লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতির কারণে সরকারদলীয় অনেক নেতৃবৃন্দ শিক্ষকদের ব্যক্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, বলেছেন তারা ছাত্রনেতাদের কথায় চলে। হুম কথা অনেকাংশে সত্য। তবে সত্যের পেছনেও তো সত্য থাকে। সেই সত্যটাকে লুকালে অন্য সত্যটা মিথ্যের মতো শোনায়। এটি অনেকটা বরের ঘরের পিসি, কনের ঘরের মাসির মতো শুনালো। তবে এই সত্যটাকে মাথায় রেখে হলেও শিক্ষক নেতাদের লেজুড়বৃত্তির রাজনীতি থেকে সরে আসা উচিত। এটির দায় শিক্ষক নেতাদের অবশ্যই নিতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মানসম্মত শিক্ষা ও গবেষণার জন্য প্রচুর বাজেট প্রয়োজন। আমরা যদি উন্নত বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দিকে তাকাই, তাদের গবেষণায় বরাদ্দের দিকে তাকাই, তাহলে এটি সহজেই অনুমেয় আমরা কেন টপ ৩০০ এর ভিতর নেই। কিন্তু সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে, ভালো ছাত্ররা যাতে আকৃষ্ট হয়ে শিক্ষকতা পেশায় আসে তার জন্য কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করে সরকার একের পর এক আমরা বিশ্ববিদ্যালয় করেই যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস হচ্ছে প্রাইমারী বা হাইস্কুলে, তারপরও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় করতে হবে। মজার বিষয় হচ্ছে এইসব নতুন বিশ্ববিদ্যালগুলোতে ভাইস-চ্যান্সেলর থেকে শুরু করে, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী সবাই রাজনৈতিক যো্গ্যতায় নিয়োগ পাচ্ছে, যার ফলশ্রুতিতে আমরা দেখতে পাচ্ছি, স্থায়ী ক্যাম্পাস না থাকা সত্বেও এসব প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক দামামা বন্ধ নেই। সরকারদলীয় শিক্ষক সংগঠন তৈরীই এদের কাছে শিক্ষা ও গবেষণার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কীভাবে ল্যাব ফ্যাসিলিটি বাড়ানো যায়, কোয়ালিটি এডুকেশন নিশ্চিত করা যায়, গবেষণায় আরো ভালো করা যায় সেদিকে নজর না দিয়ে, এদের প্রথম কাজ হলো সরকারদলীয় শিক্ষক সংগঠন তৈরী করা ও সেখানে গুরুত্বপূর্ণ পদ নিশ্চিত করা। কেননা এটি উপর ভবিষ্যতের অনেক কিছুই নির্ভর করছে। এর পর সেখানে ছাত্ররাজনীতি শুরু হবে এবং পুরোনোদের দেখানো পথেই চলতে থাকবে এ প্রতিষ্ঠানগুলোও। রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ পেলে রাজনীতিই তার কাছে মূখ্য হবে এটিই স্বাভাবিক।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত ১০ বছরের ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর পাবলিকেশনের দিকে তাকালে দেখা যাবে, যে সব ছাত্র টপ ৭% এর ভিতর রয়েছে, মাস্টার্সে তাদের গবেষণার মান ও ভালো জার্নালে পাবলিকেশনের হার অনেক বেশি।আবার যে সব শিক্ষক একাডেমিতে বেশি সময় দেন রাজনীতির চেয়ে, তাদেরও পাবলিকেশনের হার বেশি। একজন ছাত্র ভালো রেজাল্ট করার কারণে তার শিক্ষক হওয়ার প্রবণতা থেকেই হোক বা রিসার্চ রিলেটেড চাকুরি পাওয়ার আশা বা বিদেশে উচ্চশিক্ষা জন্যই হোক, রিসার্চে তার ডেডিকেশন লেভেল অন্যরকম থাকে। সেটির আউটপুট হিসেবে অনেকেই মাস্টার্সের রিসার্চ ভালো জার্নালে পাবলিশড করতে পারছে। খুব কম সংখ্যক শিক্ষক ও ছাত্র রয়েছে, যারা রাজনীতি ও একাডেমি যুগপৎভাবে করতে পারছে। কিন্তু যাদের একাডেমিক রেজাল্ট খুব একটা ভালো না বা টপ ১০ এ যারা নেই, বা যারা ধরেই নেয়ছেন বিসিএস, ব্যাংক বা অন্য কোন জবে যাবেন, তাদের ক্ষেত্রে রিসার্চ যেনো একটা গলার কাঁটা। তাদের কাছে রিসার্চ বা পাবলিকেশন গুরুত্বপূর্ণ নয়, মাস্টার্স ডিগ্রীটা গুরুত্বপূর্ণ। তাদের যায়গায় দাঁড়ালে রিসার্চকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে সময় দেয়ার কোন যৌক্তিকতা আমিও খুঁজে পাই না। কেননা রিসার্চ করতে যে সময় দিতে হয়, সেটি সে বিসিএস বা জব রিলেটেড পড়াশোনায় দেয়। কারণ মাস্টার্স শেষ হওয়ার পর পরই তার একটা জব দরকার। আর এটির রেজাল্ট হচ্ছে বাকৃবিতে প্রতিবছর ৫০০’র বেশী ছাত্র মাস্টার্স করলেও ভালো মানের রিসার্চ বা পাবলিকেশন একেবারে হাতে গোনা। অনেকেরই এ রিসার্চ অভিজ্ঞতা পরবর্তী জীবনে কোন কাজেই আসছে না। অনেকেই আবার অনিহা সত্বেও অনেকটা বাধ্য হয়েই শুধু ডিগ্রীটার জন্য মাস্টার্স করছেন। এক বাংলাদেশে প্রতিবছর যে পরিমাণথিসি হয়, ইউরোপের অনেক দেশেই এত থিসিস হয়। কিন্তু আপসোস হচ্ছে এগুলোর ৯০% ই কোন কাজে আসছে না বা পাবলিকেশনে যাচ্ছে না, আবার প্রকাশ হলেও এমন জার্নালে প্রকাশ হচ্ছে সেগুলোর আর্ন্তজাতিক কোন স্বীকৃতি নেই।

এটি থেকে উত্তরনের পথ কি তাহলে? ছাত্রদের ফ্রি করে দেয়া। বিসিএসসহ সব ধরনের চাকুরির পরীক্ষায় মাস্টার্সকে বাদ দেয়া শুধু রিসার্চসহ সুনির্দিষ্ট ফিল্ড ছাড়া।সবার মাস্টার্স করাকে নিরুৎসাহিত করা্ ।যারা করবে যথাযথভাবে পাবলিকেশনসহ মাস্টার্স করা।এতে করে চাকুরী প্রার্থীদের চাপও কমবে। এটি কোন বিশ্ববিদ্যালয় করতে পারবে না। জাতীয়ভাবে এটি করতে হবে। সবার জন্য মাস্টার্সকে নিরুৎসাহিত করে এটিকে একটি প্রেস্টিজিয়াস ও দূর্লভ ডিগ্রী করতে পারলেই কেবল এটি থেকে সুফল মিলবে। পাশাপাশি শিক্ষকদের রিসার্চ তত্ববধানের জন্য রিসার্চ গ্র্যান্ট নিশ্চিত করা। একজন প্রফেসরের কোন গ্র্যান্ট না থাকা সত্বেও তিনি যদি বছরে ১০ জন ছাত্র সুপারভাইজ করেন, সেখানে রিসার্চের অবস্থা কি হবে, সহজে অনুমেয়। পাশাপাশি ছাত্র ও শিক্ষকদের ল্যাবের তুলনায় রাজনীতিত সরব ভূমিকা রিসার্চকে আরো ম্লান করে তুলেছে।
শিক্ষক ও ছাত্রদের রাজনীতি করার যোৗক্তিক কোন কারণ নেই। স্বাধীনতাযুদ্ধসহ অনেক ক্রান্তিকালে ছাত্ররা এগিয়ে এসেছিলো, ভবিষ্যতেও আসবে। প্রয়োজন দেখা দিলে তাদেরকে রাজপথে নামানো থেকে কেউ আটকাতে পারবে না। কোটা আন্দোলন ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে আমরা যেটি দেখেছি। তাছাড়া শিক্ষাঙ্গনে তাদের ন্যায্য দাবি-দাওয়া আদায়ের জন্য ছাত্রসংসদ থাকা উচিত, যেখানে সব ছাত্রদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়। শিক্ষকদের দাবি-দাওয়া আদায়ে শিক্ষক সমিতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তার জন্য রাজনৈতিক ব্যানারে কোন শিক্ষক সংগঠন দরকার নেই।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলো রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের চাকরি পাওয়ার নিরাপদ আশ্রয়স্থল। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন ফেল করা, কোন রকমে পাশ করা ছাত্রও শিক্ষক হয়েছেন। কিছুদিন আগে ফেসবুকে সেটি ব্যাপক সমালোচিত হলেও আদৌ কিছুই হয় নি। একই ক্লাসের টপারকে না নিয়ে তাকে নেওয়া হয়েছে। অফিসার নিয়োগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতাদের নিয়োগ দেয়া প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়েই অলিখিত নিয়ম্।প্রায় বিশ্ববিদ্যালয়েই অফিসারদের একটা বড় অংশ ছাত্রনেতাদের মধ্যে থেকে আসে। এটি সব সরকারের বেলাই সত্য। পুরো বিশ্ববিদ্যালয় লাইফে কোন রকমে পাশ করলেও রাজনৈতিক কারনে চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় তারা সব সময়ই এগিয়ে। এখানে কে কত বড় ত্যাগী নেতা সেটা দেখা হয়। মানবিক নিয়োগ নামে নতুন নিয়োগ পদ্ধতি চালু করে দিয়ে গেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েরই এক সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর। এখন যারা বিরোধীদলে, তারা ক্ষমতায় আসলেও নিয়মে এরকমই থাকবে। শুধু মানুষগুলো পরিবর্তন হবে, ‍নিয়মের কোন হেরফের হবে না। অনিয়মেই এখানে আসল নিয়ম। আমরা একটা চক্রের ভিতর ঘুরপাক খাচ্ছি।


রাজনীতি খারাপ নয়। কিন্তু রাজনীতির নামে যা চলছে তা নিসন্দেঃহে খারাপ। বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন রিসার্চ প্রতিষ্ঠানগুলোকে যদি এ রাজনীতির বাহিরে রাখা সম্ভব হতো, কিংবা সব ধরনের নিয়োগ যদি রাজনৈতিক বিবেচনায় না দিয়ে শুধু মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে হতো, তবে নিঃসন্দেহে প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে যেতো, রাজনৈতিক দামামাও কমে যেতো। মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের সুফল বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েট পাচ্ছে। যদিও প্রতিষ্ঠান দুটি রাজনীতির বাইরে নয়। সাম্প্রতিক সময়ে বুয়েট বেরিয়ে আসতে পারলেও বাকৃবি এখনও পারে নি। আগামী ১০ বছরে বুয়েট সেরা ১০০ এর ভিতর চলে আসতে পারে শুধুমাত্র এই একটি সিদ্ধান্তের জন্য। দেশের সব প্রতিষ্ঠানে যদি মেধাকে মূল্যায়ন করা হতো তবে দেশ টেকসই উন্নয়নে অনেকদূর এগিয়ে যেতো।

মন্তব্যসমূহ