রাজনীতির সত্যিকার উদ্দেশ্য মহৎ। মানুষের ভালো কিছুর জন্যই মানুষ রাজনীতি করে। প্রবীণ রাজনীতিবিদদের জীবনী পড়লে সেটাই প্রতীয়মান হয়। কিন্তু রাজনীতি দিনে দিনে লাভজনক পেশায় পরিণত হয়েছে। তাই সব বয়সের, অন্য সব পেশার মানুষ এই পেশার দিকে ঝুকঁছে। যে পেশা একজন ছাত্রকেও হাজার কোটি টাকার মালিক বানাতে পারে। একজন সরকারি চাকুরীজীবিকে শতকোটি টাকার মালিক করতে পারে। তাই প্রায় সব প্রতিষ্ঠানে আছে রাজনৈতিক মহড়া। প্রতিযোগীতা বেড়ে যাওয়ায় সত্যিকার রাজনীতিবিদরা কোনঠাসা হয়ে পড়েছে। সেটিই যেন প্রবীণ রাজনীতিবিদরা সংসদে বলার চেষ্টা করলেন।
এখন যে কাউকে জিজ্ঞেস করুন যে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কি হয়? সহজ উত্তর পাবেন।শিক্ষা, গবেষণা্ ও রাজনীতি।একজন ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর পর তার রাজনৈতিক হাতেখড়ি দেয়া হয়। তারপর শিক্ষা ও পরবর্তীতে গবেষণা। তাই জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এদেশে পরিচিত যতটা না শিক্ষা ও গবেষণার জন্য তার থেকেও অধিক তার রাজনৈতিক চর্চা ও ইতিহাসের জন্য। এ মূহুর্তে ঢাবির ১০ টি সেরা অর্জনের কথা বলতে বলা হলে, দায়িত্বশীলদের কাছ থেকে উত্তর আসবে ৯ টিই রাজনৈতিক সফলতার কথা। স্বাধীনতার এত বছর পরও স্বাধীনতাকে পুঁজি করে এগিয়ে চলার সব থেকে খারাপ উদাহরন সম্ভবত এটি। দেশের ক্রাইসিসে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান অনস্বীকার্য। স্বাধীনতা সংগ্রামে তাদের অবদান অতুলনীয়, ও গৌরবগাঁথা। তাই বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল কনসেপ্ট থেকে সরে গেলে সেটি সত্যি দুঃখজনক। বাকি প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও একই পথে হাটছে।
ছাত্রদের মতো একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকও রাজনীতির বাইরে নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি, শিক্ষক রাজনীতি, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পৃথক পৃথক রাজনৈতিক প্লাটফর্ম আছে। রাজনীতিবিদরা রাজনীতি করেন গণমানুষের জন্য। তাহলে এনাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য কি?
এক্ই সরকার দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলে এসব জায়গায় একই দলের বিভিন্ন গ্রুপ গড়ে উঠে। তখন তাদের রাজনীতির একমাত্র লক্ষ্য হয়ে উঠে কিভারে অন্য গ্রপটিকে হেয় করা যায়, ছোট করা যায় এসব আরকি। তখন দেখে মনে হয় রাজনীতি এবং রাজনীতিই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। দুঃখজনক হলেও সত্য বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্রমাগত নিম্নগামীতার প্রধানতম কারণ হচ্ছে বিরাজমান ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা রাজনীতি। এদের রাজনীতির একমাত্র লক্ষ্য নিজের রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রদর্শন করে ব্যক্তিস্বার্থ রক্ষা করা। তাই যদি না হত তবে ছাত্রদের আবাসন, ডাইনিংসহ সব সমস্যার সমাধান হয়ে যেতো।গণরুমে একসাথে ১০০ জন থাকা লাগতো না। শিক্ষকদের বিভিন্ন ন্যায্য দাবি দাওয়া এভাবে আটকে থাকতো না। ছাত্ররাজনীতি তো ছাত্রদের জন্যই হওয়ার কথা ছিলো, শিক্ষক রাজনীতির কথা আর নাই বললাম। রাজনীতির নামে চলছে নোংরা রাজনীতি। অনেক শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্ব
আজ ভারত, কিউবা, ইরান তারাও নিজেদের টিকা ব্যবহার করতে পারছে আর আমরা মুখ চেয়ে বসে আছি। তাদের সাথে আমাদের তফাৎটা কোথায়? তফাৎটা হচ্ছে দেশপ্রেমে। আমরা সেটিতে অনেক পিছিয়ে। আমরা জনগণের করের হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে বৃত্তি দিয়ে প্রতিবছর বিদেশে পিএইচডি করার জন্য পাঠাচ্ছি। এটিতে দুটি মারাত্নক ভুল আমাদের চোখ এড়িয়ে গেছে।
এক. এ হাজার কোটি টাকা দিয়ে দেশেই বিশ্বমানের ও রাজনীতিমুক্ত একটি ইনস্টিটিউট করা যেতো যেটিতে গবেষণা হতো বিশ্বমানের, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের কাজ করার সুযোগ তৈরী হতো। পিএইচ ডি ডিগ্রী এখানে থেকেই দেয়া যেতো। বিশ্বের নামকরা বিজ্ঞানীদের এখানে ভিজিটিং ফেলো হিসেবে রাখা যেতো।ভারত, পাকিস্থান যেটি করেছে। হয়তো এতোদিনে দেশেই টিকা উৎপাদন করা যেতো। টিকা কিনতে কত হাজার কোটি ডলার লাগবে সেটি একবার হিসেব করে দেখুন। বাংলাদেশি টাকায় সেটি কত তাও হিসেব করুন।
দুই. যাদের সরাসরি পিএইচডির প্রয়োজন নেই, তাদেরকেই এত কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ করে বিদেশে পাঠানো হচ্ছে। সে বিদেশে রিসার্চ করে দেশে এসে ম্যানেজেরিয়াল কাজ করছে। তার রিসার্চ দেশে কোন কাজে লাগছে না। কেননা সে জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করতে পারছে না কেননা তার চাকুরি তাকে এটা পারমিট করে না। একমাত্র একাডেমিশিয়ানের পক্ষেই সেটি সম্ভব যারা কিনা এই ধরনের স্কলারশিপ থেকে এক প্রকার বঞ্চিত। অথচ দেশে একটা বিশ্বমানের ইনস্টিটিউট থাকলেিএ সমস্যা অনেকাংশে সমাধান হতো।
আমরা টেকসই উন্নয়ন বলে যে চিৎকার করি, সেটি শুধু চিৎকারই, বুঝি না কিছুই। টেকসই উন্নয়ন হলো শিক্ষা ও গবেষণার উন্নয়ন। একটা উন্নত দেশ দেখান যারা শুধু অবকাঠামো ইন্নয়ন দিয়ে বিশ্বে উন্নত দেশের তকমা পেয়েছে? একটিও পাবেন না ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Please do not enter any spam link in the comment box