প্রোএকটিভ ও রিয়েক্টিভ মানুষ

শান্তিময় একটি দিন দরকার। মস্তিষ্কের নিউরনগুলো একটু শান্তি চায়। একটু প্রশান্তি চায়। একটু ভাল খবর শুনতে চায়। চারিদিকে নানা মুনির নানা মত মস্তিষ্ক আর নিতে পারছে না। একদিক থেকে দেখলে পুরো পৃথিবীতেই অশান্তির দামামা চলছে। সমাজে প্রোএকটিভ মানুষের সংখ্যা কমে রিয়েক্টিভ মানুষের সংখ্যা বেড়ে গেলে সামাজিক সমস্যা বেশি দেখা দেয়। সমাজে যারা সাধারণ মানুষের নিয়ে ডিল করে, তাদের নিয়ন্ত্রণ করে, অপরাধ দমনে কাজ করে তাদের প্রোএকটিভ এটিচিউড শেখানো দরকার, প্রোএকটিভ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা দরকার। তারা যদি বেশি রিয়েক্টিভ হয়ে যায়, সেটি সমাজের ক্ষতি করে, অহেতুক রক্তপাত ঘটায়। Proactive অর্থ হচ্ছে উত্তেজিত না হয়ে, আবেগ তাড়িত না হয়ে ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা। Proactive মানুষ চেঁচামেচি করবে না, গালাগালিও করবে না মারামারিত’ দূরের কথা! এর বিপরীতধর্মী reactive মানুষ তারা রাগালে রাগে, ক্ষ্যাপালে ক্ষ্যাপে, সমালোচনা করলেতো রক্ষে নেই। reactive লোকেরা তোষামোদীতে খুশি হয়, চাটুকারিতায় গলে যায়। সহিষ্ণুতা তাদের মাঝে থাকে না। একটু ধৈয্য ধরলে যে অনেক কিছুই এড়ানো সম্ভব সেটি রিয়েক্টিভ মানুষ বুঝতে চায় না। এটি বুঝতে চায় না যে একটি অপ্রীতিকর ঘটনা অনেকগুলো ঘটনার জন্ম দেয়। একটির পর একটি ঘটতে থাকে। সেটির শেষ দরকার। কোন রক্তপাত নয়, কোন যুদ্ধ নয়, কোন অশান্তি নয়। প্রোএকটিভ মানুষে পূর্ণ একটা সমাজ চাই।

বাংলাদেশের ৫০ হলো। কিন্তু এ সমাজের বয়স অনেক। শত শত বছরের পুরোনো এ সমাজ। মনে রাখতে হবে এ সমাজের বেশিরভাগই বাঙালি মুসলমান। আহমেদ ছফার ’বাঙালি মুসলমানের মন’ বইটি পড়লে এদের সম্পর্কে কিছুটা জানা সম্ভব। এরকম একটা সমাজের কোন পরিবর্তন রাতারাতি সম্ভব নয়। একটি সমাজ পরিবর্তনের অর্থ তাদের শাসকগোষ্ঠী থেকে শুরু করে সাধারণ জনগন পর্যন্ত প্রত্যেকের একটা টেকসই ইতিবাচক মানসিক পরিবর্তন।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগের জাপান ও যুদ্ধ পরবর্তী জাপান এক নয়। তাদের সমাজটি আর আগের মতন নেই। অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে সাথে সমাজের মানুষের মানসিকতার উন্নয়নটাও জরুরি। অন্যথায় সামাজিক অপরাধ অনেকগুণে বেড়ে যায়। শাসকশ্রেণী থেকে শুরু করে আমজনতা, প্রত্যেকটা স্তরে এ অপরাধপ্রবণতা বিস্তার লাভ করে। তাই সমাজের মানুষের মানসিক পরিবর্তন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সমাজের প্রোএকটিভ মানুষ তৈরীতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে শিক্ষা। সঠিক শিক্ষা মানবিক গুনাবলিতে পূর্ণ মানুষ তৈরী করে। যে পরিবর্তনটি কোরিয়া, জাপান সমাজে হয়েছে, সেটি বাংলাদেশ, ভারত, মায়ানমারের সমাজে শুরুই হয় নি। বরং মানবিক গুণাবলির আরো অবনতি ঘটেছে। এদিকে নজর দেয়া আশু প্রয়োজন সামাজিক শান্তির জন্য। সামাজির অপরাধ হ্রাসের জন্য। শান্তিময় একটা সমাজের জন্য প্রোএকটিভ মানুষ খুবই দরকার।

মন্তব্যসমূহ