অক্সিজেন সমাচারঃ প্রেক্ষিত বাংলাদেশ



বিগত কিছুদিন কোভিড রোগীর সংখ্যা বড়ে যাওয়ায় হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেনের চাহিদা প্রায় দ্বিগুন হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তিকৃত প্রায় প্রত্যেক কোভিড রোগীরই বর্তমানে অক্সিজেন সরবরাহ করতে হচ্ছে। ইতোমধ্যে আমরা দেখেছি ভারতে অক্সিজেন সংকটের বিভিন্ন চিত্র। এ মূহুর্তে বাংলাদেশে অক্সিজেনের চাহিদা ও যোগান সম্পর্কে একটু জানার চেষ্টা করি।

অক্সিজেন মূলত হাসপাতাল ও শিল্প কারখানা বিশেষ করে স্টিল, টেক্সটাইলসহ অন্যান্য কারখানায় প্রয়োজন। এজন্য কোম্পানিগুলো মূলত দুই ধরনের অক্সিজেন উৎপাদন করে, মেডিকেল গ্রেড ও ইন্ডাস্ট্রি গ্রেড।
চাহিদাঃ বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রতিদিন ১৫০ টনের অধিক মেডিকেল অক্সিজেন প্রয়োজন। সামনে পরিস্থিতি অবনতি ঘটলে এটির আরো পরিমাণ বাড়বে।
যোগানঃ
বাংলাদেশে মূলত লিনডে বাংলাদেশ ও স্পেকট্রা অক্সিজেন লিমিটেড অক্সিজেনের বড় যোগানদাতা। এ দুটি কোম্পানি চাহিদার সিংহভাগ যোগান দিয়ে থাকে। লিনডে বাংলাদেশ একটি বহুজাতিক কোম্পানি। এদের বাংলাদেশে দুটি ও ভারতে একটি প্ল্যান্ট রয়েছে। বাংলাদেশে এদুটি প্ল্যান্ট থেকে গড়ে ৭০-৮০ টন মেডিকেল অক্সিজেন প্রতিদিন তৈরী হয়। পাশাপাশি যান্ত্রিক ত্রটিজনিত কারনে কোন একটি বন্ধ থাকলে ভারত থেকেও তারা অক্সিজেন নিয়ে আসে (২০% এর মতো)। সমস্যা হচ্ছে সংকটকালীন মুহূর্তে প্ল্যান্ট বন্ধ থাকলে কিংবা ভারতে থেকে অক্সিজেন নিয়ে আসা বন্ধ হলে ব্যাপক অক্সিজেন সংকটে পড়বার সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপশি স্পেকট্রা বাংলাদেশ প্রতিদিন প্রায় ২৫-৩০ টন অক্সিজেন উৎপাদন করছে। এছাড়াও ইসলাম অক্সিজেন লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি ২৮০০ কিউবিক মিটার অক্সিজেন প্রতিদিন তৈরী করছে। কোম্পানিটি ভারত থেকে প্রতি সপ্তাহে ৩০ টনের মতো অক্সিজেন আমদানি করতো যেটি সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে ১৫ টনে নেমে এসেছে এবং অদূর ভবিষ্যতে আরো কমে যেতে পারে।
সবদিক বিবেচনা করলে লিনডেই মূলত সিংহভাগ (৮০%) অক্সিজেনের যোগানদাতা। কিন্তু তাদের প্ল্যান্টগুলো (নারায়নগঞ্জ ও চট্টগ্রাম) যান্ত্রিক ত্রুটিজনিত কারণে বন্ধ থাকলে বাংলাদেশের কি হবে সেটি গুরুত্বের সাথে দেখা উচিত। গত ডিসেম্বরে তাদের একটি প্ল্যান্ট বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে। পাশাপাশি খারাপ পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্যও সরকারের উচিত বিকল্প উৎস তৈরী করা। সেজন্য সরকারী অর্থায়নে নিজস্ব প্ল্যান্টের কোন বিকল্প নেই। ৫-৩০ কোটির মধ্যেই অক্সিজেন প্ল্যান্ট করা সম্ভব (এটির কম টাকায়ও সম্ভব) এবং একই সাথে এটি করতে খুব দীর্ঘ সময়ও লাগে না। আশ্চর্য হয়েছি এটি ভেবে যে দেশে সরকারী কোন অক্সিজেন প্ল্যান্ট নেই। এ পরিমান টাকা তো সরকারের কাছে হাতের ময়লাও না। কত হাজার কোটি টাকার প্রকল্প পাস হচ্ছে, এরকম ছোট একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া বর্তমান পরিস্থিতিতে অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার কাজ হবে। গতবছরে এ ধরনের পরিকল্পনা হাতে নিলে বর্তমানে হয়তো প্ল্যান্টগুলো অক্সিজেন উৎপাদন করতো।
দেশে নীতিনির্ধারনী পর্যায়ে দূরদর্শী লোকের খুব অভাব। কোভিডকালে বিভিন্ন সিদ্ধান্তে (ভ্যাক্সিনসহ অন্যান্য) এটির প্রতিফলন দেখেছি। অতিদ্রুত দেশে প্রত্যেকটি বিভাগে সরকারী অর্থায়নে একটি করে অক্সিজেন প্ল্যান্ট করার অনুরোধ জানাচ্ছি যাতে সরকারী হাসপাতালে এ প্ল্যান্টগুলো থেকে অক্সিজেন সরবরাহ করা সম্ভব হয়। এটি করতে হয়তো ১০০-১৫০ কোটি টাকাখরচ হবে যেটি বাংলাদেশের বর্তমান সক্ষমতায় খুবই সম্ভব।ভারতে যখন অক্সিজেনের অভাবে মানুষ মরছে, এমতাবস্থায় ভারত সরকার ৫৫১ টি অক্সিজেন প্ল্যান্ট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং এ খাতে বাজেট ধরা হয়েছে ২০০ কোটি টাকা। সেখানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে গেছে আগেই। তার প্রভাবে ভারত থেকে যে অক্সিজেন বাংলাদেশে আসতো সেটিও তারা বন্ধ করে দিয়েছে। বাংলাদেশেও পরিস্থিতি নাগালের বাইরে যাওয়ার আগেই সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়াটা জরুরি।যদিও দেশে বর্তমানেও অক্সিজেনের সংকট রয়েছে। এটি তীব্র সংকটে ঘনীভূত হওয়ার আগেই ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। আশা করছি সরকার সময় থাকতে মনোযোগী হবেন। কেননা সময়ের একফোঁড় অসময়ের দশফোঁড়।

মন্তব্যসমূহ