কঠিন ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় বাংলাদেশ

আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা পতনের পর ইউনুস সরকারের কাছে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সহস্র প্রতিকূলতাকে সামাল দিয়ে টিকে থাকা। আর্থিক বড় ধাক্কার পাশাপাশি আরো অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে। ভারত যে এতটা নগ্নভাবে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার উস্কানি দিবে, এ বিষয়ে আশঙ্কা থাকলেও তাদের বাংলাদেশ বিষয়ক পররাষ্ট্রনীতির নাজুক অবস্থা দেখে হতাশ হয়েছি। এই দেশ কিভাবে এশিয়ার সুপার পাওয়ার হবে!!!তবে বাংলাদেশের জনগণের অসীম প্রজ্ঞা তাদের এই কূট বুদ্ধিতে জল ঢেলে দিয়েছে। 

একজন বাংলাদেশী  হিন্দু ধর্মের পাশাপাশি  বাংলাদেশের একজন নাগরিকও।  নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্রের সব আইন তার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। একজন হিন্দু যদি অপরাধ করে, তারপর নিজ সংগঠন থেকে নৈতিক স্খলনের দায়ে বহিষ্কৃত হয়, সেইরকম একজন হিন্দুকে রাষ্ট্র গ্রেফতার করলে তার জন্য ভারত বিবৃতি দিবে, এটি দুঃখজনক। সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাতস্বরূপ । এই বিষয়ে দেশবাসীকে সতর্ক ও এক থাকতে হবে। 

আওয়ামী লীগ তার জায়গা দেশ অস্থিতিশীল করবার সব রকম চেষ্টা করে যাচ্ছে। তাদের দেশে রেখে যাওয়া কর্মী সমর্থক এসব ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে। দেশে দুর্নীতির যে বেপরোয়া ও রমরমা বাণিজ্য সেটা বন্ধ হয়েছে। পুলিশের একটা অংশ কাজে যোগ দেয় নি। অতীতে সরকারি যেসব কর্মকর্তা অসদুপায় কোটি টাকা কমিয়েছেন, তারাও একরকম ভয়ে আছে। দেশের কর্মক্ষম জনগোষ্টির একটা বড় অংশ এসব নানাবিধ কারণে বর্তমান সরকারের বিদায় চায়।  সব কিছুকে নিয়ন্ত্রণে রেখে দেশ চালানো অত্যন্ত কঠিন। শুধু প্রফেসর ইউনূসের জন্য নয়, আলাদিনের জিনের জন্যও কঠিন। 

তার মানে এই নয় যে, বর্তমান সরকারের সব সিদ্ধান্ত সঠিক। বিশেষ করে উপদেষ্টা পরিষদের নিয়োগ। তাদের কাজের অগ্রগতি নিয়েও প্রশ্ন আছে। তবে এসব দেখে হতাশ হওয়া যাবে না। তাদের গঠনমূলক সমালোচনা করে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহযোগিতা করতে হবে। বিএনপি সহ অন্য রাজনীতিক দলগুলোকে এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নাগরিক সমাজ, আলেম সমাজ, ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল সহ সবাইকে যথাযথ ভূমিকা রাখতে হবে। দেশে এই মুহূর্তে আইন শৃঙ্খলা রক্ষা এক নাম্বার প্রায়োরিটি হওয়া উচিত। সব জাস্টিস বন্ধে কঠোর হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। পুলিশকে ফাংশনাল করা খুব জরুরি। 

জুলাই আগস্ট এ যারা মারা গেছেন ও আহত হয়েছেন, তাদের খুনিদের বিচার নিশ্চিতকরণ জরুরি। এটির অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হওয়া দরকার। নিহত ও আহতদের পূর্ণাঙ্গ ডাটাবেজ তৈরি করা, সেই সব পরিবারকে পুনর্বাসন করা, আহতদের যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ সরকারকে অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে করে ফেলা উচিত। প্রয়োজনে উপদেষ্টা পরিষদের কলেবর বৃদ্ধি করুন। যোগ্য লোকদের স্থান দিন। বাংলাদেশ বিনির্মাণের এমন সুযোগ হয়তো আর আসবে না। 

নূরন্নবী সাগর

মন্তব্যসমূহ